ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ইউনিটি’র ফ্যাসিস্টের দোসরমুক্ত করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে জাস্টিস ফর জুলাই, ইবি শাখা।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। এতে তারা অনতিবিলম্বে রিপোর্টার্স ইউনিটি থেকে ফ্যাসিস্টদের দোসর মুক্ত করার হুশিয়ারি দেন এবং কমিটির সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখবে বলে ঘোষণা দেয়।

এসময় ‘জাস্টিস ফর জুলাই’র আহ্বায়ক ও অর্থনীতি বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান এবং মুখপাত্র ও ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাজমিন সহ উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

এসময় মুখপাত্র তাজমিন বলেন, অনতিবিলম্বে রিপোর্টার্স ইউনিটিকে ফ্যাসিস্টদের দোসর মুক্ত করতে হবে। যদি না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে জাস্টিস ফর জুলাই ইবি শাখার পক্ষ থেকে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সাংবাদিকদের সমাজের দর্পণ বা আয়না বলা হয় কিন্তু আমরা দেখছি রিপোর্টার্স ইউনিটির আয়নাতে ধুলা জমে গেছে। আমরা চাই অবিলম্বে এই ধুলো পরিষ্কার করা হোক। যাদের মদদে এই সংগঠন তৈরি করা হয়েছে তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমরা দ্রুত এই কমিটি সংস্কার করুন। আর যারা দোসরদের সহযোগী হয়ে এতদিন কাজ করেছে তারা দ্রুত সংগঠন ত্যাগ করুন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সংগঠন ফ্যাসিবাদের সাথে আপোস করবে না।

সংগঠনটির আহ্বায়ক নাহিদ হাসান বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কিছু সংগঠনের কমিটি দেয়া হচ্ছে যেখানে দোসরদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিশেষ করে রিপোর্টার্স ইউনিটির কমিটিতে এমন কিছু মানুষ নিচ্ছে যারা বিগত স্বৈরশাসকের মদদপুষ্ট সংগঠন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কমিটিতে যুক্ত ছিল। জুলাই বিপ্লবের সময় তারা এমন কিছু কাজ করছে যা তারা শহিদদের সাথে বেইমানি করেছে। পূর্ববর্তী কমিটির সাথে সম্পৃক্ত এমন কিছু মানুষ ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের তারা যুক্ত করে রেখেছে। এই সংগঠন আমূল পরিবর্তন করে ফ্যাসিবাদ মুক্ত কমিটি ঘোষণা করবে এটাই আমাদের চাওয়া। আমরা সাংবাদিকতার মহৎ পেশাকে কলঙ্কমুক্ত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

এর আগে বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের রিপোর্টার্স ইউনিটির নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটির ব্যাপারে মন্তব্য করতে দেখা যায়। বাধন বিশ্বাস স্পর্শ নামের এক সাধারণ শিক্ষার্থী বলেন, খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে এই কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় এই কমিটির বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বয়কট ঘোষণা করা হবে। কোনো ফ্যাসিবাদের সঙ্গী এই কমিটিতে থাকতে পারবে না। ফ্যাসিবাদ মুক্ত নতুন কমিটি চাই।

আবু সালেহ নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, দেশের সর্বস্তরের সকল সংগঠন গুলোকে ফ্যাসবাদ মুক্তি করার দাবি জানাচ্ছি।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ ইঞ্চি মাটিতেও ফ্যাসিবাদের কোনো স্থান নেই। রক্তঝড়া সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ইবি তার অস্তিত্বকে রক্ষা করেছে এখানে আওয়ামীলীগের কোনো দোসরের স্থান হবে না। কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুনভাবে ফ্যাসিবাদ মুক্ত কমিটি ঘোষণা করা হোক।

রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মাহমুদুল হাসান কবির এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, প্রাণের সংগঠন ইবি রিপোর্টার্স ইউনিটি প্রতিষ্ঠার ষষ্ঠ বর্ষে পদার্পণ করেছে, হয়েছে জাতীয় ক্ষমতার পালা বদল। ফেসবুকের আদলে চোখে পড়লো একদল সাহসী জুনিয়ররা মাহবুব স্যারের একনিষ্ঠ রাকিবের কমিটি ভেঙে দিয়ে গঠনতান্ত্রিক পন্থায় সকলের সম্মতিতে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে। জুনিয়রদের এই সাহসিকতা আমার মন ছুয়েছে নিঃসন্দেহে। মনে হয়েছে এইতো রিপোর্টার্স ইউনিটি যাকে এভাবে দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। এবার বোধহয় লেজুড়বৃত্তি থেকে সংগঠনটি বেরিয়ে আসছে ফাইনালি। তবে পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেখে আমাকে যে বিষয়টি খুব খুব পীড়া দিয়েছে তা হলো সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় না রেখে, সিনিয়রদের মূল্যায়ন না করে পূর্ববর্তী কমিটির প্রভাব বিস্তারে সহযোগী হয়ে জুনিয়রদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করেছে নতুন এই শীর্ষনেতৃবৃন্দ। এটা একটা সংগঠনের জন্য খুবই খুবই খারাপ দিক বলে আমার মনে হয়েছে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এবারও আন্দাজ করছি নোংরা দলীয়করণ, প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তার করার আছর রয়ে গেছে এখনও।

উল্লেখ্য, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। অভিযোগ রয়েছে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিতর্কিত ব্যক্তিদের স্থান দেওয়া হয়েছে । এ নিয়ে বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে কমিটির সংস্কার দাবি করে বিভিন্ন মন্তব্য করতে দেখা যায়।